সূরা মূলক (তরজমাসহ)

সূরা মূলক (তরজমাসহ)

হাফেয কারী মাওলানা আতাউর রহমান হেলাল। জন্ম: 1951 খৃস্টাব্দ। বাড়ি: কোলাপাড়া, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ।

পিতা: মাওলানা রশিদুদ্দীন আহমাদ বিক্রমপুরী রহ., বিশিষ্ট শাগরিদ ও মুজায: হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.। শায়খুল হিন্দ মাওলানা

মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ. এর শাগরেদ এবং ঢাকার প্রাচীনতম মাদ্রাসা তাঁতীবাজারের প্রথম শায়খুল হাদীস মাওলানা মমতাযুদ্দীন রহ. ছিলেন তাঁর নানা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সাবেক খতীব মাওলানা ওবায়দুল হক ছিলেন তাঁর আপন খালু।

বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ ও নূরিয়া মাদ্রাসায়। উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন পাকিস্তানের জামিয়া ফারুকিয়া করাচী ও বিননূরি টাউন মাদ্রাসা থেকে।
তাঁর হিফযের অন্যতম উস্তাদ হাফেয নূরুল হুদা (ছোট হুজুর: লালবাগ জামিয়া)। পাকিস্তানে তিনি মাদানী রহ. এর বিশিষ্ট শাগরিদ ও শায়খুল হাদীস যাকারিয়া রহ. এর খলীফা হযরত সালীমুল্লাহ খান রহ. এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে ধন্য হয়েছেন। আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম আখতার রহ. এর সঙ্গে তাঁর ছিল অনেকটা বন্ধুত্বের মত সম্পর্ক। যদিও দুইজনের বয়সে অনেক তফাত, এবং যদিও তাঁর অনেক উস্তাদরা পর্যন্ত হাকীম আখতার রহ. এর হাতে বায়আত ছিলেন। বড়দের এই নেক নযর ও বিশেষ দৃষ্টি লাভের একটা বাহ্যিক কারণও ছিল। তা হল তাঁর পিতা। কেননা তিনি ছিলেন শায়খুল আরব ওয়াল আজম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর বিশিষ্ট শাগরিদ ও মুজায।

ছোটবেলা থেকেই নেককার ও দ্বীনদার আলিম ওলামা এবং আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের বিশেষ স্নেহ লাভে ধন্য হয়েছেন। এখনো সুযোগ পেলে ছুটে যান আলিম ওলামার মজলিসে, আল্লাহওয়ালাদের দরবারে। ছোটবেলা থেকে যাদের আদর যত্নে সিক্ত হয়েছেন প্রায় ই তাঁদের আলোচনা করেন। বিশেষত যাদের গল্প ঘটনা তিনি অধিকাংশ সময় বলে থাকেন তাঁরা হলেন:- মুফতী দ্বীন মুহাম্মদ খান, পীরজি হুজুর মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব, মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা ইউসুফ বিননূরী, মুফতী মাহমুদ, মাওলানা মাসীহ উল্লাহ খান, মুহইউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক, মুফতী মুহাম্মদ শফী, মাদানী রহ. এর প্রথম খলীফা সিলেটের শায়খে বাঘা মাওলানা বশীরুদ্দীন, মাওলানা সালিমুল্লাহ খান, মাওলানা আতহার আলী, খতীব মাওলানা ওবায়দুল হক, মুফতী আব্দুল মুঈজ, মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম আখতার, মাওলানা আমীনুল ইসলাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম।

বর্তমানে তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর গুমনাম খলীফা শায়খ নুমান মাদানীর (পটিয়া) কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি ও তাযকিয়ার সবক লাভ করছেন। শায়খ নুমান মাদানী যেমন নিভৃতে থাকতে পছন্দ করেন তেমনই তাঁর এ শাগরিদও নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। প্রচার ও খ্যাতিবিমুখ থাকতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন।

কর্মজীবনের শুরু থেকে অদ্যাবধি তিনি মাদ্রাসা মসজিদের খিদমতে নিয়োজিত। বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেছেন। জামিয়া আযহারের তত্ত্বাবধানে আযহারের ড. শায়খ খালফ আব্দুল জাওয়াদ কর্তৃক পরিচালিত জামিয়াতুত দিরাসাত করাচীসহ বিভিন্ন জামিয়াতে শিক্ষকতা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক মাদ্রাসা মক্তব ও জামিয়া। বর্তমানে তিনি লালবাগ খাজে দেওয়ান মসজিদে খতীব হিসেবে এবং গ্রামের বাড়িতে নিজের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া মাদানিয়া কোলাপাড়া মুন্সিরগঞ্জের প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত।

ব্যক্তি জীবনে তাঁর একটাই শখ। একটাই কাজ। তা হল কুরআন তিলাওয়াত এবং কুরআনের প্রচার। তিনি নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করেন। ফজরের পর বাসা থেকে বের হননা, যতক্ষণ না দৈনন্দিনের তিলাওয়াত শেষ না হয়। বাসে রিকশায় যেখানেই সুযোগ পান কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকেন। তিনি প্রায় ই বলেন, আমার কাছে একটা সম্পদ ই আছে। তা হল আলকুরআন।
আল্লাহ তাঁকে মায়াবী কণ্ঠস্বর দান করেছেন। সচরাচর এমন মধুর তিলাওয়াত শুনা যায় না। অভিনব ও বিরল ধরনের কণ্ঠস্বরের অধিকারী তিনি। পরিণত বয়সেও তাঁর তিলাওয়াতের মাধুর্য শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। আচ্ছন্ন করে রাখে।
শৈশব কৈশোর কাটিয়েছেন পুরাণ ঢাকায়। সেই কৈশোর বয়স থেকেই পুরাণ ঢাকায় তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। মরহুম কারী ওবায়দুল্লাহ (খতীব: চকবাজার শাহী মসজিদ), মরহুম কারী বশীর এবং হাফেয বজলু ও হাফেয খালিদের নামের সাথে তাঁর নামটিও আলেম ওলামা এবং জনসাধারণে সমভাবে শ্রদ্ধার সঙে উচ্চারিত হয়।
জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্যও এটি। কুরআন শিক্ষার প্রচার প্রসার। স্ত্রীকে কুরআন শিক্ষার কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। বিনা বেতনে। আল্লাহর ওয়াস্তে। সন্তানদেরকে হাফেজ আলিম বানিয়েছেন। বানাচ্ছেন। পুত্রবধূ নির্বাচনে একমাত্র শর্ত ছিল হাফেজা আলিমা হতে হবে। আল্লাহ সে ইচ্ছাও পূরণ করেছেন।
একাধিক মক্তব মাদ্রাসা ও দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখানেই আবাস গড়েছেন সেখানেই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কয়েকটি মাদ্রাসার নাম:- মাদ্রাসা রশিদিয়া তাহসীনুল কুরআন করাচী, জামিয়া রশিদিয়া ঢাকা, জামিয়া মাদানিয়া কোলাপাড়া মুন্সীগঞ্জ। তিনি শুধু মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ই নন, বরং একজন দক্ষ পরিচালকও। মাদ্রাসা পরিচালনা সম্পর্কে তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি:- প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন মানুষ সহজ মনে করে। অথচ এ দায়িত্ব বড় কঠিন। বিশেষত আমাদের গ্রামবাংলার পরিবেশে। একজন প্রিন্সিপালকে এ বিষয়টিও খিয়াল রাখতে হয়, মাদ্রাসার পুকুরের মাছটি লাফিয়ে কতটুকু ওপরে ওঠল আর ডুব দিয়ে কতটুকু নীচ পর্যন্ত গেল।
..
আল্লাহ তাআলা তাঁকে সিহহাত ও আফিয়াত দান করুন। দীর্ঘ হায়াত নসীব করুন। তাঁর থেকে বেশী বেশী উপকৃত হবার তাওফীক দান করুন। আমীন।


ভিডিও বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন/মন্তব্য করুন:
bnmedia.islaminlife.com/contact-us

আমাদের সাইটসমূহ ও ম্যাগাযিন:
বাংলা সাইট: islaminlife.com/bn
ইংরেজী সাইট: islaminlife.com
ইংরেজী ত্রৈমাসিক ম্যাগাযিন: islaminlife.com/magazines


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

একই ক্যাটাগরির আরো ভিডিও